বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২০ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম: বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা মোকাবেলা ও ঘটনার তদন্তে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য সু-নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে একমত হয়েছে ঢাকা-ওয়াশিংটন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নিরাপত্তা ইস্যু। নিরাপত্তা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রস্তাব মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ বলে সূত্র জানিয়েছে। এর আগে সময়ে সময়ে দেশটির পক্ষ থেকে দেওয়া বিভিন্ন প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও এবার যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সফর শেষে নিশা দেশাই বলেছেন, বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ সফর শেষ করলাম।
সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাইর সফরে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ঠিক কোন কোন বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা লাগবে তা নির্ধারণ করেই সহযোগিতা নেওয়া হবে।
ঢাকা সফর শেষ করে কলম্বো যাওয়ার আগে টুইট বার্তায় এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। টুইট বার্তায় নিশা দেশাই বলেছেন, Discussed w Bangladesh govt specific ways US can support law enforcement & security forces in investigating & responding to terror attacks.’ সন্ত্রাসী আক্রমন ঠেকানো এবং এসব ঘটনা তদন্ত করতে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে সহায়তা করতে পারে, তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে সু-নির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে।
অপর একটি টুইটে তিনি লিখেছেন, Concluding an important visit to Bangladesh. I conveyed support & solidarity of United States to stand w Bangladesh in combatting terrorism.’ বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ সফর শেষ করলাম। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে থেকে সহযোগিতা করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র-এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছি।
নিশা দেশাই ঢাকায় নেমেই প্রথম বৈঠক করেছিলেন পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে। এরপরেই দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেছিলেন, ঢাকার গুলশানে সন্ত্রাসী হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সহমর্মিতা প্রকাশ করেছে। সন্ত্রাস দমনে দেশটির পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার কথা বলেছেন নিশা দেশাই। এজন্য পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে তারা। তাদের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে।
এ বৈঠকের বিষয়ে নিশা দেশাইর বক্তব্যসহ ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস বিবৃতি দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের প্রতিশ্রুতি আগের মতোই অব্যাহত থাকবে। সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞ সহায়তার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের প্রশ্ন রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক ভাল যাচ্ছিলো না। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার আগের অবস্থানেই রয়েছে। তারা বাংলাদেশ সরকারকে বারংবার বলে আসছে, সবদলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করতে বারবার তাগাদা দিলেও সরকার সে কথা শুনেনি।
সর্বশেষ গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে আইএস আছে এমন কথা সরকারকে বিশ্বাস করতে হবে। তারা আইএস প্রতিরোধে কাজ করতে চায়, এ প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু সে সময়ে এই বক্তব্যর বিরোধিতা করেছিল বাংলাদেশ।
কিন্তু এবার ঢাকা ত্যাগের পূর্বে নিশা দেশাই বাংলাদেশের সিনিয়র কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বলেছেন, অতীতে বাংলাদেশ সরকার এই সমস্যাকে স্রেফ দেশের ভেতরের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ফসল মনে করত। বর্তমানে এরসঙ্গে আন্তর্জাতিক যে একটি যোগসাজশ রয়েছে তা মেনে নিতে শুরু করেছে সরকার। আগের অবস্থান থেকে সরকারের সরে আসাকে কূটনৈতিক সফলতা হিসেবেই দেখছেন নিশা দেশাই। নিশার এ কূটনৈতিক সফলতার মধ্য দিয়ে আমেরিকা-বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন দিকে মোড় নিতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের বাংলাদেশি সাবেক কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হওয়ার পরে সর্বশেষ গত মে মাসে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। এ নিয়ে ঢাকায় এসে তখন বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে। এছাড়াও মিডিয়ার অগোচরে ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বৈঠক করেছিলেন ঢাকাস্থ ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধনের সঙ্গে। তবে নিশা দেশাইর এবারের সফরের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। গুলশানে হামলার পর বিশ্ব বাংলাদেশকে ভিন্নভাবে দেখতে শুরু করে। নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি উঠে আসে কূটনীতিকদের মাঝে।
এ হামলার পরে জাপান, ইতালি, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশই বাংলাদেশকে সন্ত্রাস মোকাবেলায় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। বাদ যায়নি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পর্যন্ত। এরই মধ্যে নিশা দেশাই তড়িঘড়ি করে ঢাকা সফরে আসেন। নিশা দেশাইর সঙ্গে বৈঠকের পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছিলেন, সন্ত্রাস মোকাবেলায় সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছেন নিশা দেশাই। বাংলাদেশ যেভাবে চাইবে, সেভাবে সহায়তা দিতে তারা রাজি।
প্রসঙ্গত, গুলশান ও কিশোরগঞ্জের সংঘটিত জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে আকস্মিক এই সফরে ঢাকা আসেন মার্কিন এ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। এ মাসের শেষের দিকে তার বাংলাদেশ ভ্রমণের কথা ছিল। তার সঙ্গে আসেন দেশটির উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনপ্রিত সিং আনান্দ।